নতুন করোনাভাইরাসের আশঙ্কার দিক তুলে ধরে যে চিকিৎসক প্রথম সহকর্মীদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন, সেই লি ওয়েনল্যাংও মারা গেলেন প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।
বিবিসি জানায়, লি ওয়েনল্যাংয়ের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গভীর রাতে চীনা সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক বিভ্রান্তি শেষে উহান সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ২টা ৫৮ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ হাসপাতালেরই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন লি ওয়েনল্যাং, হাসপাতালে কাজ করার সময় রোগীদের মাধ্যমে তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন। লি বলেছিলেন, সুস্থ হয়ে ওঠার পর তিনি আবারও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামনের কাতারে থাকতে চান।
৩৪ বছর বয়সী লি গত ৩০ ডিসেম্বর লি এক বার্তায় তার সহকর্মীদের বলেছিলেন, নতুন এ করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। আর সেজন্য চীনা কর্তৃপক্ষ তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল মুচলেকা আদায় করে।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাণ সংহারী নতুন করোনাভাইরাসে সেখানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩৬ জনে। চীনের বাইরে মারা গেছে আরও দুজন।
কেবল চীনের মূল ভূখণ্ডেই নভেল বা নতেুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ১৬১। চীনের বাইরে আরও অন্তত ২৫টি দেশ ও অঞ্চলে আড়াইশর বেশি মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।
উহানের বীর
গত ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে নিউমোনিয়ার মত উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বেশ কয়েকজন রোগী। উহান সেন্ট্রাল হসপিটালে কাজ করা সময় এ ভাইরাসে সংক্রমণের সাতটি ঘটনা পান লি ওয়েনল্যাং। তার কাছে এই ভাইরাসটিকে দেখতে সার্সের মতোই মনে হয়, যেটা ২০০৩ সালে বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নিয়েছিল।
ভাইরাসটি নিয়ে সতর্ক করে সংক্রমণ এড়াতে গত ৩০ ডিসেম্বর সহকর্মী চিকিৎসকদের ‘প্রতিরক্ষামূলক পোশাক’ পরার পরামর্শ দিয়ে একটি চ্যাট গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলেন ডা. লি। তখন তিনি জানতেন না যে এ রোগটির কারণ সম্পূর্ণ নতুন এক করোনাভাইরাস, যাকে এখন বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস বা ২০১৯-এনসিওভি।
চার দিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তার কাছে ছুটে যান। একটি মুচলেকায় তার স্বাক্ষর নেন, যেখানে তার বিরুদ্ধে ‘সামাজিক শৃঙ্খলায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টিকারী মিথ্যা মন্তব্য’ করার অভিযোগ আনা হয়।
সেখানে বলা হয়, “আমরা আপনাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি: আপনি যদি অধৈর্য হয়ে জেদ ধরে এমন অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যান, তাহলে আপনাকে বিচারের আওতায় আনা হবে- বুঝেছেন?”
এর নিচে ডা. লির হাতে লেখা: “হ্যাঁ, আমি বুঝেছি।”